সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

রাজধানীতে নতুন আতঙ্কের নাম ‘ডেঙ্গু’

1 min read

করোনা মহামারির পরিস্থিতির মধ্যেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে দ্রুত বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই গত বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে অন্তত ১ হাজার ৪৩০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে এই জুলাই মাসেই। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন শুধু এ মাসেই। তাদের ৯৯ শতাংশই রাজধানী ঢাকার। বিভিন্ন হাসপাতালে কেউ চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে ঢাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৯৯৫ জন। তাদের মধ্যে জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ছয় মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭২ জন। আর জুলাই মাসের এ ১৫ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৩ জন ডেঙ্গু রোগী। তাই ইতিমধ্যে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বেসরকারী ও সরকারি হাসপাতালে খোলা হয়েছে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষ ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডে শুধু ডেঙ্গু রোগীদেরই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৫০৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছেন ৫০০ জন। আর বাকি নয় জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগের। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৯৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ৪৩৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে সারাদেশে মোট ১ হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে সাত জন মারা যান। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বছর ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেনি। আর এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি মৃত্যুর ঘটনা তাদের তদন্তাধীন আছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের রোগতত্ত্ববিদ কিঙ্কর ঘোষ জানান, গত দুই দিনে হাসপাতালটিতে পাঁচ বছরের নিচে তিন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মৃতরা হলো গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা ১৪ মাসের রওজা, সাভারের বাসিন্দা আড়াই বছরের তুবা ও বাসাবো এলাকার সাড়ে চার বছরের মোমিম।

এ ছাড়া ২৯তম বিসিএস অল ক্যাডার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার চক্রবর্তী জানান, ২৫ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি-রফতানি বিভাগের ডেপুটি কন্ট্রোলার জিয়াউর রহমানের ১০ বছরের ছেলে জিয়ন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীয় সিটি হাসপাতালে মারা যায়।

এদিকে সরকার ছয়টি বিশেষায়িত হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আমরা ছয়টা হাসপাতাল ডেডিকেট করার পরিকল্পনা করছি। এ জন্য জনবল বরাদ্দের কাজও শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ) ডা. আফসানা আলমগীর খান জানান, এর মধ্যে তারা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রস্তাব পেয়েছেন। যা এখন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রস্তাবিত তালিকায় প্রাথমিকভাবে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ড হাসপাতাল ও মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, কমলাপুরের রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল এবং টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালের নাম রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে তাদের মশক নিধন কার্যক্রম বিশেষ করে এডিস মশা মারার বিষয়টি জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, ২০১৯ সালের মতো (এ বছরেও) সবগুলো জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেহেতু এর মধ্যে প্রচুর মানুষ ঈদ উদযাপন করতে ঢাকার বাইরে গেছেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানান, মশক নিধন অভিযান জোরদারের জন্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সবগুলো সিটি করপোরশনকে নির্দেশ দিয়েছে।

রামপুরা এলাকার বাসিন্দা সালমা আক্তার জানান, তাদের পাশের বাসার একটি শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এছাড়াও তাদের এলাকায় প্রায় বাসাই জ্বরে আক্রান্ত রোগী আছে। তাই এলাকার মধ্যে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু আতঙ্ক রয়েছে।

যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, আমাদের বাড়ির ওপর এবং পাশে বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। হয়তো সেখানে পানি জমে মশা হতে পারে। প্রথমে আমার বড় মেয়ের হয়েছিল সুস্থ হওয়ার পর ছোট মেয়েটির আবার ডেঙ্গু।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, সিটি থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য ডোর টু ডোর সেবা প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। শুধু সিটি কর্পোরেশনের লোকজন কিংবা মেয়র নেমে অভিযান করলেই সংক্রমণ কমানো যাবে না। সুত্র ঃ বিবারতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *