সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে সীমান্তে সংকট : কী করবে বাংলাদেশ?

1 min read

দীর্ঘ সাত দশক ধরে অ্যাকশন বা থ্রিলার মুভির মতোই নাটকীয়ভাবে চলমান মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সামরিক বাহিনীর সংঘাত। আন্তর্জাতিক খবর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেও টান টান উত্তেজনা নিয়ে মিয়ানমারের দিকেই ঘুরে আসে চোখ। চরম মানবিক বিপর্যয়ের ইতিহাস যেন পিছুই ছাড়ছে না দেশটির। সাম্প্রতিক সময়ে এই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে ভয়ানক অশনিসংকেত নিয়ে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা মিয়ানমারের এই অভ্যন্তরীণ সংকট সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকরা। সংকটের প্রভাব সীমান্ত পেরিয়ে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে এই চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশ, চীন ও ভারত সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছে। বসবাসের অনুপযোগী এই ভূখণ্ড থেকে প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।

সংঘাতের এই পর্যায়ে চলতি বছর বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কয়েকশ সদস্য। পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত বরাবর রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত লড়াইয়ে আরাকান আর্মির দাপটে অনেকটাই নির্জীব জান্তা বাহিনী। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে চিন ও রাখাইন রাজ্যের বিপুল এলাকা ইতিমধ্যেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ক্রমেই ভীতিকর হয়ে উঠছে। অজানা আশঙ্কায় সীমান্ত বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। প্রশাসনের খোলা আশ্রয়কেন্দ্রসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে তারা আশ্রয় নিচ্ছেন। বুধবার কক্সবাজারের হোয়াইক্য সীমান্তের ওপারে নতুন করে সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিকামী বিদ্রোহীদের সংঘাতে ব্যবহৃত মর্টারশেলের আঘাতে হতাহতের ঘটনায় লোকজন ঘরবাড়ি ছাড়ছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী তুমব্র“ বাজারপাড়া, কোনাপাড়া, মাঝেরপাড়া, ঘুমধুমপাড়া, জলপাইতলীর কয়েক শতাধিক মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রসহ দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের খোলা উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০টি পরিবারের ২৪৩ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা আত্ময়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। তবে ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কেউ যায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলছে থেমে থেমে গোলাগুলি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে উলুবুনিয়া সীমান্তে থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তের এপারে কক্সবাজারের উখিয়ার হোয়াইক্যং এলাকার কয়েকটি বাড়িতে এসে গুলি আঘাত করে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি।

এদিকে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে ৬০ কিলোমিটার জলসীমা রয়েছে তা দিয়ে যাতে কোনো মিয়ানমার নাগরিক আসতে না পারে সেজন্য টহল বাড়িয়েছে কোস্ট গার্ড। নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় শতাধিক মিয়ানমার নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে তারা।

মিয়ানমার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নাফ নদী দিয়ে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে টেকনাফ থেকে।

উল্লেখ্য, গুরুত্বপূর্ণ সব সীমান্ত দখলে মরিয়া বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীর সামনে দাঁড়াতেই পারছে না ক্ষমতাসীন জান্তা প্রশাসন। মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের উত্থান আর জান্তাদের এই ধরাশায়ী রূপ গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই বিশ্বনজরে রয়েছে। চলমান এসব সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে এথনিক আর্মড অর্গানাইজেশনস (ইএও) ও থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স (টিবিএ)।

থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স হলো তিনটি বিদ্রোহী সংগঠনের একটি জোট। এতে যুক্ত আরাকান আর্মি, এমএনডিএএ এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। সম্মিলিতভাবে এসব শক্তি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি মানদণ্ডে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ এবং নিকৃষ্ট শাসকগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে জান্তা সরকার। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে ৪ হাজার ৪৭৪ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন; গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে। এছাড়াও জান্তা সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ৭৮ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।

অনলাইন স্টেটসম্যানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে বিদ্রোহীদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে প্রায় ২০০ আউটপোস্ট হারিয়েছে জান্তারা। দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতির প্রতিবেদনে মিয়ানমারের জান্তা প্রশাসন কীভাবে দেশ থেকে কারাগারে রূপ দিয়েছে মিয়ানমারকে সেটিই ব্যাখ্যা করেছে প্রতিবেদনটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে তীব্র মানবিক সংকট, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার হটস্পট, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সবচেয়ে বিপজ্জনক, সবচেয়ে বড় কারাগার, সাংবাদিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন নিকৃষ্ট ক্যাটাগরিতে এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে প্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ নাগরিক বা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ জরুরি মানবিক সহায়তার আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিন বছর আগের সেনা অভ্যুত্থানের আগে এমন চাহিদার আওতায় ছিল মাত্র ১০ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের এই সামরিক অভ্যুত্থান দেশটিতে নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে মানবাধিকার সংকট।

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর জন্য এটা শুধু এখন একটি পরাজয় নয়, বরং এটা ইঙ্গিত যে, জনপ্রিয়তা হারিয়ে সামরিক বাহিনীর দিন ফুরিয়ে আসছে।

২০১৫ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বিরোধী এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয় পায়। তবে দলটি নিজেদের মতো দেশ পরিচালনা করতে পারেনি। তার কারণ সেনা সরকার প্রণীত ২০০৮ সালের সংবিধান। এই সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সংসদের অন্তত ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ থাকবে। সামরিক বাহিনীর সদস্যের সম্মতি ছাড়া সংবিধানের ধারা ও আইন পরিবর্তনের উপায় নেই।এরপরও ২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এনএলডি পুনরায় জয়ী হয়। ভরাডুবি হয় সেনা-সমর্থিত দলের। এরপর দেশটির সামরিক বাহিনী নির্বাচনে ‘কারচুপি’র অভিযোগ এনে পরের বছর ২০২১ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি পুনরায় সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেয়। অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সারা দেশে দমন অভিযান চালায়। হাজার হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়।

প্রশ্ন উঠেছে যে, মিয়ানমারে এত দীর্ঘ সময় ধরে কীভাবে সামরিক বাহিনী তাদের আধিপত্য বজায় রেখে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তারা এই অবস্থা বজায় রাখতে যাচ্ছে কিনা?

থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক থিটিনান পংসুধিরাক-এর মতে, “মিয়ানমারের এই গৃহযুদ্ধ মিয়ানমারের জান্তা সরকারের জন্য জেতা অসম্ভব হয়ে পড়েছে এবং এতে পরাজয় এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। সংখ্যার দিক থেকে দেখতে গেলেও এটা বোঝা যায়। তারা প্রতিদিন সেনা হারাচ্ছে, কিন্তু নতুন সেনা ভর্তি হচ্ছে না, শক্তিবৃদ্ধি করা হচ্ছে না, রসদ পুনঃসরবরাহ করা হচ্ছে না, কোনও সেনা আর টহল দিতেও ইচ্ছুক নয় এবং প্রতিনিয়ত তারা আক্রমণের মুখে পড়ছে।”

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনি সেনাবাহিনীর পরাজয় সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না। কারণ শান রাজ্যে সমস্যার মুখে পড়লেও অন্যান্য স্থানে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সামরিক বাহিনী।

মিয়ানমারের একটি ক্রাইসিস গ্রুপের অ্যাডভাইজার রিচার্ড হরসি বলেন, “মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা জান্তা সরকারের জন্য পরাজয় অনিবার্য নয়। তবে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা জানে যে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র পথ হচ্ছে লড়াই চালিয়ে যাওয়া। আর তারা সেটাই করবে। তাই পরাজয় অবশ্যম্ভাবী নয়। তবে এটি গত বেশ কয়েক দশকের তুলনায় এখন কিছুটা বেশি সম্ভাবনাময় বলে মনে হচ্ছে।”

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স বা বিশ্ব শান্তি সূচক-২০২৩ অনুসারে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর মধ্যে ১৮তম স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস-এর তথ্য (এএপিপি) অনুসারে, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারে মোট ১৯ হাজার ৯৯৩ জন রাজনৈতিক বন্দি কারাগারে ছিল, যার মধ্যে তিন হাজার ৭৮০ জনই নারী।

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক ডেভিড আই স্টেইনবার্গ ‘দ্য মিলিটারি ইন বার্মা/মিয়ানমার’ নামে তার বইয়ে লিখেছেন, সামরিক বাহিনী তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা কখনও ধরে রেখেছে বিভিন্ন ডিক্রি জারি করে, রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংবিধানে বিধি অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে। চতুর্থ ও সর্বশেষ সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে শীর্ষ জেনারেল মিন অং লাইং এবং রাজনৈতিক নেতা অং সান সু চির মধ্যকার ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব।

চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারিতেও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন ও আরাকান রাজ্যেও যুদ্ধ-পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দু’পক্ষের সংঘাত এতটাই তীব্র আকার নেয় যে চলতি বছরের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এর আগে শত শত সৈন্য সীমান্ত দিয়ে চীন ও ভারতে পালিয়েছে। যুদ্ধ না করেই হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে।

একটি দেশের নাগরিক বিনা অনুমতিতে অন্য আরেকটি দেশের সীমানায় ঢুকে পড়লে সেটিকে ‘অনুপ্রবেশ’ হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে আশ্রয়দাতা দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আশ্রয় গ্রহীতার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা জানানো হয়। এরপর দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ফেরত পাঠানো হয়।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েকশ সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে মানবিক দিক বিবেচনা করে। শিগগিরই তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। কিন্তু তাদেরকে ফেরত পাঠাতে ঠিক কতদিন লাগতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

সীমান্ত সুরক্ষা ও এবং সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার বিবার্তাকে বলেন, অং সান সুচির ক্ষমতায় ছিল নামে মাত্র, সবকিছুই সেনাবাহিনীর দখলে। তা না হলে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়ে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতেন না, বলতেন না এখানে কোনো গণহত্যা হয়নি, কোনো জ্বালাও-পোড়াও হয়নি, ধর্ষণ, কোনো অপরাধ হয়নি। এরকম ডাহা মিথ্যা কথা তিনি বলতেন না, যদি তার ক্ষমতা থাকত।

১৯৫২ সাল থেকে এই পর্যন্ত সেনাবাহিনী কখনো প্রত্যক্ষভাবে, কখনো পরোক্ষভাবে ক্ষমতায় আছে। শুধু সুচির শাসনামলে আর তার আগে পাঁচ বছর অন্য সরকার দ্বারা শাসিত ছিল মিয়ানমার, বাদবাকি সময়ে সেনাবাহিনীই মিয়ানমারের ক্ষমতায়।

২০০৮ সালে সেনাবাহিনী পার্লামেন্টে এমন এক সংবিধান প্রণয়ন করে যাতে এমনভাবে আইন পাশ করা হয় যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সব গুরুত্বপূর্ণ পদে সেনাবাহিনীর লোকই আসীন করতে হবে। এদের পার্লামেন্টে মিয়ানমারের যত বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠি আছে, এরা সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়, চাঁদাবাজি করে নিজেদের খরচ চালায়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ যেখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। যেহেতু যুদ্ধটা সীমান্ত ঘেঁষে হচ্ছে, আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় হচ্ছে সেক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের যা করণীয় সেটা আমাদের করতে হবে। যুদ্ধের কনভেনশন অনুযায়ী তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। যুদ্ধের তীব্রতা কয়েকদিন বেড়েছিল। আবার হয়ত কমবে, আবার বাড়বে। মিয়ানমার সরকারের প্রতি আমাদের কঠোরভাবে একইসাথে কূটনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করে আলাপ-আলোচনা করে এই সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ একটা ট্রাইক টিম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাজ হলো, সেখান সীমান্তের মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা, আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে সর্তক রাখা। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা, যেকোনো পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা।

বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পরিষ্কার, বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিটি বাংলাদেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিনতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করে না, বাংলাদেশের গণমাধ্যমেরও উচিত এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে প্রচার করা।

আশ্রয় নেওয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠাতে সরকার ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে বলে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সংঘাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর ৩৩০ জন সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ পাঠাচ্ছে দেশটির জান্তা সরকার। সবকিছু ঠিক থাকলে বর্তমানে সমুদ্রপথে অবস্থানকারী জাহাজটি শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার উপকূলে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে শনিবার জাহাজ এসে পৌঁছাবে বলে মিয়ানমার আমাদের জানিয়েছে।

সামিনা বিপাশা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *