সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

‘কওমি মাদ্রাসাগুলো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, নারীবিদ্বেষী গুজবের কারখানা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে’

1 min read

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কওমি মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের জাতিবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, নারীবিদ্বেষী গুজবের কারখানা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

সোমবার শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। সেখানেই শিক্ষামন্ত্রীর এমন পর্যবেক্ষণ আসে বলে নির্মূল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

দীপু মনি বলেন, ‘আমরা যখন কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করছি, তখন কওমি মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের জাতিবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নারীবিদ্বেষী গুজবের কারখানা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চূড়ান্ত অপব্যবহার করছে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।’

সকল কওমি মাদ্রাসা সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে’- এই প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ ওয়েবিনারে নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মওলানা জিয়াউল হাসানও বক্তব্য দেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা একমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থার চিন্তা দেখতে পাই। কিন্তু সেই শিক্ষাভাবনা নিয়ে আমরা আর এগোতে পারিনি। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী, একাত্তরের পরাজিত মৌলবাদী গোষ্ঠীর রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক শিক্ষার বিস্তার করে।’

দীপু মনি বলেন, সামাজিক আন্দোলনের মানুষ হিসেবে সত্য-মিথ্যার হিসাব করা ‘সহজ’ হলেও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় তা সহজ হয় না। সরকার নতুন যে কারিকুলাম করছে, তার ভিত্তি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু।

সরকারের অবস্থান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে মূলধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। মানুষ শুধু দারিদ্র্যের কারণে নয়, ধর্মের কারণেও সন্তানকে কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। এই বাস্তবতাও আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের সবার দায়িত্ব সমাজে সচেতনতার ক্ষেত্র তৈরি করা। মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা না জিহাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে- সে সম্পর্কে বাবা-মাকে জানাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি যোগ করেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই যথাসময়ের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাংলাদেশকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন। সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে।’

জামায়াত-হেফাজতিরা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো ‘জঙ্গি-মৌলবাদী-সন্ত্রাসী’ রাষ্ট্র বানানোর জন্য কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ‘ব্যবহার করছে’ বলে অভিযোগ করেন শাহরিয়ার কবির।

বলেন, ‘২৫ হাজারের বেশি কওমি মাদ্রাসার ৩০ লক্ষাধিক ছাত্র-শিক্ষককে আমরা জামায়াত-হেফাজতের সন্ত্রাসী রাজনীতিক অভিলাষ পূরণের জন্য তাদের কাছে জিম্মি রাখতে পারি না।’

হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ অবস্থানের পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসায় সরকারের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি।

শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, জামায়াত-হেফাজতের একমাত্র উদ্দেশ্য ‘ক্ষমতায়’ যাওয়া এবং স্বাধীনতাকে ‘ভূলুণ্ঠিত’ করা।

‘কিন্তু ৩০ লক্ষ শহীদ ও প্রায় সোয়া ৪ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে আমরা তা মেনে নেব না। মাদ্রাসার ছাত্ররা পাকিস্তানি ভাবধারায় গড়ে উঠছে। শিক্ষার মূলধারায় তাদের আনতে হবে।’- শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী।

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে হেফাজত রাজনৈতিক দল। সুযোগ পেলেই তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাদের বিশাল কর্মীবাহিনী আছে। এই কর্মীবাহিনীরা হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্র, যাদের লেখাপড়া করার কথা। কিন্তু লেখাপড়ার বাইরে গিয়ে কওমি মাদ্রাসায় তারা ধর্মান্ধ, মৌলবাদী হিসেবে গড়ে ওঠে। এজন্য আমরা দায়ী। বাবা-মা দারিদ্র্যের কারণে তাদেরকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিচ্ছে। তাদের সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা আমরা করে দিতে পারছি না।’

বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ‘কোরআন অনুযায়ী ‘হেফাজত-ই ইসলাম’ নামটি পরিপন্থি। কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষক ছাত্রের বৈষম্য প্রকট। কওমি মাদ্রাসায় মানবতার শিক্ষা, দেশপ্রেমের শিক্ষা দেওয়া হয় না। জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে কোনো মাদ্রাসায় এখন পর্যন্ত একটি চিঠি যায়নি।’

অন্যদের মধ্যে ডাকসুর প্রাক্তন ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম, নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি মমতাজ লতিফ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা হাসান রফিক, সুইডেন প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক সাব্বির খান, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *