সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

ডা. জেনির বিচার চান ওসিরা

1 min read

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত লকডাউনে সড়কে সাধারণ মানুষ বিশেষ প্রয়োজনে বের হতে পুলিশের কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস ইস্যু করতে হয়। কিন্তু চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের মুভমেন্ট পাস ইস্যুর প্রয়োজন না হলেও পেশাদারিত্ব আইডি কার্ড নিজের কাছে রাখতে হবে। কিন্তু গত রোববার (১৮ এপ্রিল) সরকারের ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনির সঙ্গে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তার বাগবিতণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশের ইন্সপেক্টর ও অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর থানার ওসি বি এম ফরমান আলী ও যাত্রাবাড়ীর থানার ওসি মাজাহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, রোববার (১৮ এপ্রিল) নিউ মার্কেট থানাধীন এলিফ্যান্ট রোডে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আরোপিত বিধিনিষেধ কার্যকরের লক্ষ্যে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক যৌথ অভিযান পরিচালনাকালে প্রাইভেটকারে আরোহী একজন ‘অনুমেয়’ নারী চিকিৎসককে সিগন্যাল দিয়ে আইডি কার্ড দেখাতে বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। পরে তিনি নানা অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তার অবতারণা করেন এবং পুলিশের কাজে সহায়তা না করে বরং পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর চড়া হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অসৌজন্যমূলক ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করায় বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গভীর ক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিচ্ছে সরকার। চিকিৎসক, পুলিশসহ অন্যান্য পেশাজীবী অনেকেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এসব কাজ করতে গিয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধারা নিজেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রাণ উৎসর্গ করছেন। সেই সঙ্গে প্রাণঘাতী এ রোগের জীবাণুকে নিজ শরীরের মাধ্যমে বহনও করছেন বটে। তাই, সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সব পেশাজীবী, ব্যক্তি ও যানচলাচলের মুভমেন্ট পাস বা আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা জরুরি মর্মে প্রজ্ঞাপন ও নোটিশ জারি করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে নিউমার্কেট থানা পুলিশ গত রোববার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় চেকপোস্টের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছিল। অন্যান্য দায়িত্বের পাশাপাশি আরোপিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে চলাচলকারী ব্যক্তিবর্গ যেন অহেতুক বাইরে না বের হন বা বাড়ি থেকে বের হলে আইডি কার্ড বা মুভমেন্ট পাস দেখতে চাওয়া, নির্দেশনা মোতাবেক দোকান-পাট খোলা বা বন্ধ আছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থার এ বিশেষ মুহূর্তে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

সেক্ষেত্রে জনগণ পুলিশকে সহযোগিতা করবে এটাই কাম্য। সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অ্যাপ্রন পরিহিত এক নারী চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের অনধিকারচর্চা বা হেনস্তার কিছু নয়। আইডি কার্ড দেখতে চাওয়ায় ওই চিকিৎসক কর্তৃক কর্তব্যরত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট যেভাবে হেনস্তার শিকার হয় তা উপস্থিত জনতা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ধারণ করা ভিডিওচিত্র বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল হলে দেশের মানুষ তা দেখতে পায়।

পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে এক চিকিৎসকের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটি অপচেষ্টা মাত্র। কিছু লোকের উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে পেশার সবাই দায়ভার গ্রহণ করবে তা অ্যাসোসিয়েশন কখনও মনে করে না। দেশের সব চিকিৎসকদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ ও কৃতজ্ঞতা সর্বদা বিদ্যমান। ওই চিকিৎসক কর্তৃক সরকারি কাজে অসহযোগিতা প্রকাশ্যে গালিগালাজ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণে কর্তব্যরত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের স্ব-স্ব ইউনিটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

বিএসএমএমইউ-এর একজন প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসক বিষয়টি সংক্রান্তে তাৎক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের কাছে ওই চিকিৎসকের (ডা. জেনি) অশোভন আচরণের জন্য ক্ষমা চান। তদুপরি ওই নারী চিকিৎসকের অন্যায়কে সায় দিয়ে কারও সাফাই গাওয়া দুঃখজনক।

আমরা বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সেদিনের আলোচিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কর্মকাণ্ড নানাভাবে অবলোকন করে চিকিৎসকের প্রতি পুলিশ বা ম্যাজিট্রেট কর্তৃক কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ দেখতে পাইনি। এর বিহিত ব্যবস্থা না হলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট বারবার লাঞ্ছিত হবে, কাজে উদ্যম হারিয়ে ফেলবে এবং অনেকে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হয়ে এমন কাজ করার সুযোগ নেবে।

যেহেতু বিষয়টি সংবেদনশীল, যেন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণিকে মুখোমুখি দাঁড় বা একে-অপরের প্রতি ক্ষোভ বা দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, এ ঘটনায় সোমবার (১৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে ডা. সাঈদা শওকত জেনির বিচার দাবি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *