সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সুপারবাগ সংক্রমণে প্রায় ৪ কোটির মৃত্যুর শঙ্কা

1 min read

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগের কারণে আগামী ২৫ বছরে প্রায় ৪ কোটি মানুষ মারা যেতে পারেন বলে এক বৈশ্বিক বিশ্লেষণে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গবেষকরা এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়াতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। সুপারবাগ বলতে এমন ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু বোঝায়, যারা অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, ফলে এগুলো চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

এই গবেষণা বিশ্বব্যাপী সুপারবাগের প্রভাবকে ট্র্যাক করা এবং ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তা অনুমান করা প্রথম প্রচেষ্টা বলে দাবি করা হয়েছে। দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত জিআরএএম গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে দশ লাখেরও বেশি মানুষ সুপারবাগ বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)-এর কারণে মারা গেছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে সুপারবাগ সংক্রমণে মৃত্যুর হার গত তিন দশকে ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে, কারণ নবজাতকদের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। তবে এখন যখন শিশুরা এই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তখন সেগুলোর চিকিৎসা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। একই সময়ে, ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ধরনের মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী সংক্রমণের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এমআরএসএ নামক একটি স্টাফ ব্যাকটেরিয়া–যা বহু অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে–এর সংক্রমণে মৃত্যুর হার ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দ্বিগুণ হয়ে ১ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছেছে।

গবেষকরা মডেলিংয়ের মাধ্যমে অনুমান করেছেন, বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এএমআর-এর কারণে প্রতি বছর সরাসরি প্রায় ২০ লাখ মৃত্যু হবে, যা বর্তমান থেকে ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া এএমআর এর কারণে আরও ৮২ লাখ বার্ষিক মৃত্যুর শঙ্কা রয়েছে, যা প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

এই পরিস্থিতিতে, আগামী ২৫ বছরে এএমআর সরাসরি ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটাবে এবং মোট ১৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যুতে ভূমিকা রাখবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে গবেষণাটি আরও সম্ভাব্য ইতিবাচক একটি চিত্রও তুলে ধরেছে।

গবেষকদের মতে, যদি বিশ্ব সুপারবাগ সংক্রমণের উন্নত চিকিৎসা এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধগুলোর প্রাপ্যতা ব্যবস্থা করতে পারে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।

এই গবেষণায় ২২টি রোগজীবাণু, ৮৪টি ওষুধ ও জীবাণুর সংমিশ্রণ ও মেনিনজাইটিসের মতো ১১টি সংক্রামক রোগের ওপর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের ৫২ কোটি পৃথক রেকর্ড বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণার সহ-লেখক ও মার্কিন স্বাস্থ্য মেট্রিক্স ইনস্টিটিউটের মোহসেন নাগাভি বলেন, এই গবেষণার ফলাফলগুলো দেখায় যে, এএমআর কয়েক দশক ধরে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে বিদ্যমান এবং এই হুমকি বাড়ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্য দাতব্য সংস্থা দ্য ওয়েলকাম ট্রাস্ট-এর সংক্রামক রোগ নীতি প্রধান জেরেমি নক্স সতর্ক করে বলেছেন যে, এএমআর বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে।

তিনি এএফপিকে বলেন, জিআরএএম প্রতিবেদনে বর্ণিত এএমআর বোঝা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা আধুনিক চিকিৎসারভিত্তিকে ক্রমাগত দুর্বল করে দেবে। আমাদের সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি, যা অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভর করে, তা কার্যকারিতা হারাতে পারে।

নক্স আরও বলেন, গত দশকে এই বিষয়ে রাজনৈতিক মনোযোগ বৃদ্ধি পেলেও, বিশ্বের সরকারগুলো এএমআর মোকাবিলায় যথেষ্ট দ্রুত বা যথেষ্ট দূর পর্যন্ত পদক্ষেপ নেয়নি।

তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সুপারবাগ মোকাবিলা নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠককে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, তবে মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ও ভুল ব্যবহারের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

বিশ্বের দেশগুলো যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয় ও সুপারবাগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে এই বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *