সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

নথি চুরির অভিযোগ: সাংবাদিক রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হেনস্তার পর থানায় হস্তান্তর

1 min read

পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে। রাত ৮টার পর তাকে থানায় নেওয়ার সময় কর্তব্যরত পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।

পরে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘সচিবালয় থেকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় সচিবালয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলা হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার (১৭ মে) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। পরে খবর পাওয়া যায় তাকে সেখানে কর্মকর্তারা একটি কক্ষে আটকে রেখেছেন।

রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি।

একপর্যায়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নথি সরানোর অভিযোগ এনে পুলিশ ডাকা হয়েছে। পরে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় আনা হয়েছে।

প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম এই মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট করছিলেন। যার মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির রিপোর্ট ছিল। আমরা মনে করছি, এতে তিনি মন্ত্রণালয়ের আক্রোশের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।’

প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘প্রথম আলোর রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। যতটুকু জেনেছি, রোজিনা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কিন্তু এখনও তাকে আটকে রাখা হয়েছে, হাসপাতালে নিতে দিচ্ছে না। আমি তাকে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। নতুবা উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর খান ফেসবুকে লেখেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের অফিস স্টাফদের অসদাচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।’

শাহবাগ থানায় রোজিনা ইসলামের ছোট বোন সাবিনা সংবাদমাধ্যকে বলেন, আজ তার করোনার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার তারিখ ছিল। সেটা নিয়ে তিনি সচিবালয়ে যান। সেখানে তার সোর্সকে খুঁজতে থাকেন। তাকে না পেয়ে ফিরে আসতে চান। তখন দায়িত্বরত কনস্টেবল তাকে বসতে বলেন। আপু বসতে না চাইলেও তার অনুরোধে বসেন।

তিনি বলেন, সেখানে একটি কক্ষে চেয়ারে বসে একটি পত্রিকা হাতে নেন। তখনই ওই কনস্টেবল তার দিকে তেড়ে এসে জানতে চান পত্রিকা কেন নিয়েছেন হাতে। এরপর আরো কয়েকজন আসে। তারা বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় কথা বলতে থাকে। ও হুমকি দেয়। তারা পূর্বে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের বিষয় উল্লেখ করে হুমকি দেয়। তাকে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মাটিতে পুঁতে ফেলব।

এ বিষয়ে সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু সচিবের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। তবে বিস্তারিত কেউ জানাতে রাজি হননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *