সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

মরলে মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গা, মানুষ কেন ভুলে যায়: প্রধানমন্ত্রী

1 min read

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বাড়িঘর-ফ্ল্যাট সব আছে, তাদের আরও লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে কবরের মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধন-সম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায়, জানি না।

রোববার (৯ মে) সকালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অবশিষ্ট মুল অধিবাসী এবং সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১৪৪০ জনের মধ্যে প্লট বরাদ্দ-পত্র প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অংশ নেন।

গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি, মেহের আফরোজ চুমকিসহ অনেকে।

প্রধানমন্ত্রী ১৫’র আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের তৎকালীন সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের মাটিতে ফিরে আসার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম যে ঘাতকের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা ক্ষমতায়। যে কোনো সময় আমার জীবনেও আঘাত আসতে পারে। কিন্তু আমার এবং আমার ছোট বোনের এটিই প্রতিজ্ঞা ছিল, যে এদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন। সেই দুঃখী মানুষের মুখে তিনি হাসি ফোঁটাতে চেয়েছিলেন। আমাদেরকে কিছু করতে হবে দেশের মানুষের জন্য।’

এ ধারাবাহিকতায় তার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি শুধু শহরভিত্তিক না। এটি আমরা একেবারে গ্রামে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত যাচ্ছি। মানুষকে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই আমরা করে দেব। সেটিই আমাদের লক্ষ্য।’বিজ্ঞাপন

এরইমধ্যে বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা হিসাব নিয়েছি, ভূমিহীন পরিবার আড়াই লাখের মতো পরিবার পেয়েছি। এরইমধ্যে ঘর অনেককে করে দিয়েছি। আরও সামনে করে দিচ্ছি। এ ছাড়া নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরবাড়ি তৈরি করে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও তার সরকারের নানামুখি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এভাবে দেশের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। কেউ যেন একেবারে গৃহহারা না থাকে। কারণ জাতির পিতা এটি বিশ্বাস করতেন একজন মানুষের যদি একটা ঘর থাকে, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন সহজ হবে। পাশাপাশি তিনি যে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সেই সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’বিজ্ঞাপন

‘আমরা জানি যে, মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে, শহরে বাস করার। এ জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি গ্রামে মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা পায়। শহরের সুবিধা পায়। শহরে থাকার মতো যে সুযোগ-সুবিধা সব যেন তারা সেখানে বসে পায়। আমরা কিন্তু সেই ব্যবস্থাই করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। আমাদের দেশে যারা বিত্তশালী তারা প্লট কেনেন। ভালো ভালো দৃষ্টিনন্দন বাড়ি ঘর বানান। এই পূর্বাচল হলো তখনও আমি দেখেছি, এমনকি গুলশান বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকাও যাদের তাদেরও পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে নাকি ইজ্জতই থাকে না। এরকমও কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি।’বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের সতিকার প্রাপ্য, আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। কাজেই আমার সবসময় একটা প্রচেষ্টা ছিল যে, কীভাবে আপনাদেরকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব এবং আপনারা জমি দিয়েছেন অথচ আপনারা প্লট পাবেন না। এটি হতে পারে না।’

আমার কাছে একটা প্রকল্প এসেছিল, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে, পূর্বাচলে জাতির পিতার স্মৃতিস্তম্ভ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি টাওয়ার করার প্রস্তাব এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু সেটা অনুমোদন দেইনি। আমি সেই ফাইলেই লিখে দিয়েছিলাম, আগে এখানকার যারা আদিবাসী তারা তাদের প্লট পাবেন তারপর আমি এ প্রকল্প অনুমোদন দেব। তার আগে আমি কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেব না এবং কীভাবে প্লট বের করবে, সেটি যেন মন্ত্রণালয় এবং রাজউক যেন খুঁজে বের করে। এই নির্দেশনাই আমি দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়সহ রাজউক সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজকে সত্যি খুব আনন্দিত। প্লট খুঁজে বের করা, প্লটগুলো তৈরি করা এবং আজকে আপনাদের হাতে যে কাগজ তুলে দিতে পারলাম, জমির কাগজ যে আপনারা পেলেন, এর সঙ্গে যারা কাজ করেছে তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এটাই আমাদের কাজ হওয়া উচিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা বাড়ি ঘর ফ্ল্যাট সবি আছে, তাদের আরও লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে সেই কবরের মাত্র তিন হাত, সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধন-সম্পদ কেউ সাথে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায়, আমি জানি না। যা হোক আজকে আপনাদের হাতে এটা যে তুলে দিতে পারলাম। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। আর আপনারা বঞ্চিত থাকলেন না।’

‘তবে আপনারা জানেন যে, যেখানে বড় লোকদের দৌরাত্ম্য বেশি থাকে, সেখানে আবার কাজ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও এখানকার আমাদের যারা মন্ত্রী সচিব বা অন্যান্য যারা প্লটগুলো তৈরি করাতে কাজ করেছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি জানি তারা অনেক কষ্ট করে এটি করেছেন। অনেক বাধা বিপত্তি থাকা থাকার পরও তারা করতে পেরেছেন।’

‘আমি এইটুকুই চাই, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যেটুকু পারি যেভাবে পারি, মানুষকে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই সেটা আমরা করে দেব এবং প্রত্যেকটা ঘরেই বিদ্যুৎ থাকবে, আলো জ্বলবে। প্রতিটি পরিবারেরই শিক্ষিত মানুষ থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষায়-দীক্ষায় জ্ঞানে সবদিক থেকে এদেশের মানুষ উন্নত হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলব।’

‘আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধশালী হবে। উন্নত হবে এবং বিশ্বের বিস্ময় হিসাবেই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’

পূর্বাচলের মতো পরিকল্পিত শহর ঝিলমিল উত্তরাসহ আরও বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি শুধু আমরা ঢাকা শহরকেন্দ্রিক করব না। আমরা একেবারে প্রতিটি বিভাগ এবং জেলাতেও এই ধরনের পরিকল্পিত বাড়িঘর মানুষের হয়, মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়। প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন ভালভাবে বসবাসের সুযোগ পায়। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা হাতে নিচ্ছি এবং আমরা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং করে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি আপনাদের প্রাপ্য ছিল। আপনাদের প্রাপ্যটা আপনাদের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করি এবং আপনারা সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *