সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাচ্ছে সরকারের

1 min read

অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকার প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ১৮ হাজার ৭৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়লেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে ১ হাজার ৩১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার।  

করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গতি এসেছে অর্থনীতিতে; উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে আগের মতো। বেড়ে গেছে সরকারের খরচ।

কড়াকড়ি আরোপ ও সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। আর এ কারণে বাধ্য হয়ে ব্যাংকগুলোর দুয়ারে ধরনা দিতে হচ্ছে সরকাকে; বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংক ঋণের অঙ্ক।

চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১৮ হাজার ৭৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ে নেয়া ঋণের ৭২ শতাংশ।

সরকারকে বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। তবে এতে চিন্তার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের গতি ভালো; এটা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাক্ষিক তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকার প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ১৮ হাজার ৭৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়লেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে ১ হাজার ৩১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য ধরা আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার চাহিদা ছিল বেশ কম। শুরুর দিকে সরকার ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, পরিশোধ করেছিল তার চেয়ে বেশি। তবে শেষ দিকে গিয়ে নিট ঋণ দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে রেকর্ড ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নিয়েছিল সরকার।

ডিসেম্বর থেকে ঋণের গতি আরও বেড়েছে

২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া সরকারের ঋণের গতি আরও বেড়ে গেছে। নিলাম পঞ্জিকায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি ঋণ নিচ্ছে সরকার।

সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে কী পরিমাণ ঋণ নেবে, প্রতি মাসের শুরুতে তার পঞ্জিকা ব্যাংকগুলোয় পাঠানো হয়। চলতি ডিসেম্বর মাসের পঞ্জিকা অনুযায়ী, পাঁচ দিনের ১০টি নিলামে মোট ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেয়ার কথা।

এর মধ্যে ২ ডিসেম্বর ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে দেড় হাজার কোটি এবং ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ১ হাজার কোটি টাকা নেয়ার কথা। অথচ ৯১ দিন মেয়াদি বিলে ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ও ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার।

আর ৫ ডিসেম্বরের নিলামে ৯১ দিন মেয়াদি বিলে দেড় হাজার কোটি টাকা নেয়ার কথা থাকলেও নিয়েছে ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলে ১ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নিয়েছে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।

ডিসেম্বরের বাকি তিন দিনের নিলামের তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই তিন দিনের তথ্য পাওয়া গেলে এবং এই সময়ে সরকার কী পরিমাণ ঋণ ও সুদ পরিশোধ করেছে তার পুরো হিসাব পাওয়া গেলে ডিসেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক থেকে নেয়া মোট ঋণের হিসাব পাওয়া যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থবছরের শুরুর দিকে সরকারের ব্যাংক ঋণ প্রয়োজন হচ্ছিল কম। যে কারণে নিলাম পঞ্জিকায় উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঋণ কম নেয়া হয়েছে। তবে এখন সরকারের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ঋণের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। অবশ্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে পুরো অর্থবছরের যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সে অনুপাতে এখন পর্যন্ত ঋণ কম রয়েছে।’

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।

তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। এ সময়ে এনবিআরকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা আদায়ের জন্য বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির চার মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। তাতে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৯ হাজার ৩২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে এই চার মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ কমেছে ৬৬ শতাংশ।

সর্বশেষ অক্টোবর মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এটি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৪২৬ শতাংশ কম। গত বছরের অক্টোবরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দিয়েছে সরকার।

এর প্রভাবে কমছে বিক্রির পরিমাণ। আর এতে সরকারের ভবিষৎ ঋণের বোঝা লাঘবের পথ মসৃণ হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, মুনাফার হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণগ্রহণের পরিমাণ আগামী দিনগুলোয় আরও কমবে। এক ধরনের স্বস্তিতে থাকবে সরকার।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, ‘করোনার পর অর্থনীতিতে গতি ফিরে এসেছে। সরকারের উন্নয়নকাজ পুরোদমে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্য দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাজস্ব খাতের অন্যান্য খরচও বেড়েছে। তাই রাজস্ব আদায় যেটা বেড়েছে, তা দিয়ে খরচ পূরণ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।’

ঋণ বেশি নিলেও চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘বাজেটে তো একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ব্যাংক থেকে ধার করার অনুমতি দেয়া আছে। এখন দেখতে হবে, সরকার সেই লক্ষ্যে বেশি ঋণ নেয় কি না। যদি বেশি ঋণ নেয়, আর তাতে যদি বেসরকারি খাত বঞ্চিত হয়, তাতে সমস্যা। তা না হলে এই ঋণ নেয়াকে আমি খুব একটা সমস্যা দেখছি না।’

সংবাদ প্রতিদিন বিডি / ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *