সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

বাংলাদেশের স্বাধীনতায় রাশিয়ার অবদান

1 min read

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি যদি রাশিয়ার সরকার ও জনসাধারণকে ধন্যবাদ না দেই- তাহলে অন্যায় করা হবে। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারত যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধে লড়তে রাজি হলেন, যুক্তরাষ্ট্র তখন পাকিস্তানের পক্ষে নিজেদের নৌ-বহর পাঠানোর ঘোষণা দিলেন। সেসময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হলো যুক্তরাষ্ট্র যদি পাকিস্তানের পক্ষে বহর পাঠায় তাহলে তারা বাংলাদেশের পক্ষে ৫২টি নৌবহর পাঠাবে। কিন্তু কেনো রাশিয়া পক্ষ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার। নিজেদের স্বার্থে নাকি বন্ধুত্বের সুবাদে!

বর্তমানে সারা পৃথিবীর সামরিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, এমনকি অলিম্পিকে যে দুইটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা চলে তারা হলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে এই দুইটি দেশ এক হয়ে গিয়েছিল। স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তানের সেই নৃশংস গণহত্যার। আর আমাদের মুক্তিকামী মানুষদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছিলেন এই দুই পরাশক্তি। ঘোষণা দিয়েছিল ৭তম নৌবহর পাঠানোর। কিন্তু একমাত্র রাশিয়ার ভয়ে তারা নিজেদের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করে।

সেসময় ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তারা চেয়েছিল পাকিস্তান ভেঙে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হোক। মূলত এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় ভারত-রাশিয়া।

এসময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে চিঠি লিখে এই অত্যাচার (সামরিক হামলা) বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলোতেও তুলে ধরা হয় পশ্চিম পাকিস্তানের সেই অত্যাচারের কথা। যা সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতি গণমত সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছিল।

১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। ইয়াহিয়ার সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল খুবই গভীর। এ কারণে বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভাঙণ কিছুতেই মানতে পারছিলেন না তিনি। এসময় তিনি আমেরিকাতে নিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন এবং বলেন রাশিয়া যদি বাংলাদেশকে সমর্থন করে তাহলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও অবনতি হবে, কিন্তু নিক্সনের কথায় পাত্তা না দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে তৎকালীন রুশ কর্তৃপক্ষ।

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস, জুলফিকার আলী ভুট্টু চীনের কাছে একটি বিশেষ সহায়তা চেয়ে বসেন। চীন যেনো ভারতের উত্তর সীমান্তে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করে। যাতে ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করতে না পারে। কিন্তু তাদের এই আবেদনে সারা দেয়নি চীন, যার একমাত্র কারণ ছিল বাংলাদেশকে সোভিয়েতের সমর্থন। রাশিয়ার বক্তব্য ছিল চীন যদি পাকিস্তানের আবেদনে সারা দেয়, তাহলে চীন সীমান্তে একই কাজ করবে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর আগে তাদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল চীন।

মুক্তিযুদ্ধের শেষেদিক, ডিসেম্বরের ৩ তারিখ ভারত যখন বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে তখন পাকিস্তানকে বাঁচাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তোলে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে চীনও সমর্থন দেয়। ওই সময় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হলে তার সুফল পাকিস্তান পেত। কিন্তু পাকিস্তানের নিশ্চিত পরাজয় জেনে সেই প্রস্তাবে ভেটো দেয় রাশিয়া।

সেসময় ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হলে, আজকের বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে স্বাধীনতা পাওয়া নিয়ে সংশয়-সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ ছিল। সুতরাং বর্তমান বাংলাদেশের সৃষ্টির পেছনে ভারতের পাশাপাশি রাশিয়ারও অনেক অবদান রয়েছে।

যদিও কিছু কিছু বিশ্লেষকের মতে নিজেদের স্বার্থে আমাদের সহায়তা করেছে রাশিয়া। যদি তাদের কথা সত্যি হয়, তাতেওবা সমস্যা কোথায়! কারণ ১৯৭১ এর যুদ্ধে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন করেনি একটি মুসলিম রাষ্ট্রও। তারা সমর্থন করেছে পাকিস্তানের বর্বরতাকে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধ-শত বছর পার হয়েছে। এরই মধ্যে সোভিয়েত ভেঙেছে, দূর্বল হয়েছে রাশিয়া। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি তাদের বন্ধুত্বের মনোভাব এখনও আগের মতোই। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উপর কতৃত্ব চায় সেখানে রাশিয়া আমাদের দেশের উন্নয়নে তৈরি করছে পারমাণবিক চুল্লি।

হয় তো বা এ জন্যই রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনায় জাতিসংঘের অধিবেশনে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। ভুলে যায়নি পুরনো বন্ধুত্ব! বাংলাদেশ ভালভাবেই জানে রাশিয়া কখনো বিপদের সময় নিজের বন্ধুর হাত ছাড়ে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *