সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

দূরদর্শিতার অভাবে টিকা নিয়ে টালমাটাল সরকার: বিশেষজ্ঞদের মত

1 min read

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী চিহ্নিত করা নিয়ে টালবাহানা, চিকিৎসা খাতে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণা থেকে শুরু করে সর্বশেষ টিকা আমদানিতে কূটনৈতিক দূরদর্শিতার চরম অভাব জনগণের সামনে ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। কিন্তু তা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুত নেওয়া হয়নি। ফলে এপ্রিলে দেশে করোনায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত ও মারা গেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত বছরের আগস্টে চীনের সিনোভ্যাক নামে একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এই ট্রায়াল হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই চীনা কোম্পানির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহের দিকে ঝুঁকে পড়ে সরকার। কিন্তু বর্তমানে সেরাম বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার নতুন করে রাশিয়া ও চীনা কোম্পানির ভ্যাকসিনের দিকে ঝুঁকছে। এটি এক ধরনের পানি ঘোলা করে ঘাস খাওয়ার মতো অবস্থা।

গত বছর চীনা কোম্পানির ভ্যাকসিন ট্রায়ালের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রায় সব প্রস্তুতিই শেষ করে এনেছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র। সেজন্য ঢাকার সাত হাসপাতাল চিহ্নিত করা হয়েছিল- কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহানগর হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল বার্ন ইউনিট-১, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিট-২। কিন্তু হঠাৎ করে চীনা কোম্পানির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ করে দিয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু করে।

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে ভারতীয় সেরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা ও চীনা কোম্পানিকে ট্রায়ালের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘টিকা আমদানির বিষয়ে সরকারের দূরদর্শিতার অভাব ছিল। সেরামের টিকার পাশাপাশি চীনের টিকা ট্রায়ালের সুযোগ করে দেওয়া উচিত ছিল সরকারের। তাহলে টিকা সংকটের সময়ে চীনা কোম্পানির টিকা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো। একইভাবে অন্য দেশের সঙ্গেও আলোচনা করতে হতো কিন্তু সরকার সেটি করেনি। এখন টিকা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা আমদানিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা’কে দায়িত্ব না দিয়ে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে সরকার টিকা কিনতে পারতো। এছাড়া ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার চুক্তির মাধ্যমে টিকা ক্রয় করলে টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা বেশি থাকতো বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সারোয়ার আলী বলেন, ‘ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে টিকার বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছে তাতে প্রশ্ন রয়েছে। টিকা আমদানি সরকার সরাসরি না করে কেন বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে করলো। টিকার জন্য শুধু সেরামের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার ছিল। এটি যে কোনো কারণে সরকার করেনি’।

তিনি আরও বলেন, ‘চীনা কোম্পানি বাংলাদেশের হাসপাতালে টিকা ট্রায়ালের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটি সঠিক। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর না গিয়ে সেরামের ওপর নির্ভরশীলতা করলো যা এক ধরনের বোকামি’।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা আমদানির বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রথম থেকেই একক কোনো সোর্সের ওপর নির্ভর করা ঠিক হয়নি। উচিত ছিলো চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশেই টিকা উৎপাদন করা। যে সুযোগ চীনের সঙ্গে ছিলো।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৩০৫ জনের। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৫৫ জন। এনিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল সাত লাখ ৫৪ হাজার ৬১৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৩৯২ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৭২ হাজার ৩১৯ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *