সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান, নতুন কর্মসূচি পোশাক শ্রমিকদের
1 min read
ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন পোশাক শ্রমিকরা।
দাবিকৃত মজুরি বৃদ্ধি না করার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা।
৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার বিকেলে পল্টনের তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ডের সামনেই বিক্ষোভ মিছিল করেন কয়েকটি গার্মেন্টস সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবিতে দেশের পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন।
জলি তালুকদা বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার ঘোষণা প্রত্যাখান করছি। মজুরি বৃদ্ধির আমাদের যে দাবি সেটি সরকারকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১১ সংগঠন নিয়ে গঠিত হয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আগামী শুক্রবার প্রতিবাদ সমাবেশ করব।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, সরকারের কাছে আমরা ২৫ হাজার টাকা মজুরি করার দাবি জানিয়েছি। সরকার সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা এই দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।
এসময় গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, মজুরি বোর্ড যে প্রহসনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে তা দেশের ৪০ লক্ষ শ্রমিক প্রত্যাখ্যান করেছে। শ্রমিকেরা কখনোই ১২ হাজার ৫০০ টাকার প্রস্তাব মেনে নেবে না। মালিকপক্ষ ও সরকার কখনোই শ্রমিকদের মানুষ মনে করে না। আগামী শুক্রবার আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করেছি। সেখান থেকে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ মজুরি অপ্রতুল। ১২ হাজার ৫০০ টাকায় এখন কোনোভাবেই একজন শ্রমিকের জীবন চলবে না এই মজুরি পরিবর্তন করে শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।
এর আগে বিকেলে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ মজুরি ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
তিনি বলেন, সভায় অংশ নেয়া শ্রমিক প্রতিনিধিও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কার্যকর হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে মজুরি বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপরে গুলিবর্ষণ, হামলা, নির্যাতন ও শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে শিল্পে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারপক্ষের শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পোশাক শ্রমিকদের জন্য এই মজুবি বৃদ্ধিতে সমর্থন দিয়েছেন। তারপরও আমরা চেষ্টা করব এটাকে আরও বৃদ্ধি করার।
এর আগে, পোশাক শ্রমিক ও মালিকপক্ষের ছয় দফা বৈঠক শেষে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার ঘোষণা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
প্রসঙ্গত, গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দেশের পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন। ফলে বেশকিছু কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে চলতি সপ্তাহ থেকে বন্ধ কারখানাগুলো চালু হতে শুরু করে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী, পোশাক শ্রমিকরা ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছিলেন। সেই হিসেবে আগের তুলনায় ন্যূনতম মজুরি বেড়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। মজুরি বৃদ্ধির হার ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।