সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

এনআইডি সংশোধনে ভোগান্তি, ফেসবুকে পাঁচ হাজারে করে দেয়ার বিজ্ঞাপন

1 min read

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে এই কাজ করার ঘোষণায় বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। সেটা হলো, যদি বেশি টাকা দিয়ে এক দিনে সংশোধন সম্ভব, তাহলে কেন মানুষকে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। আর যদি বাইরের লোকেরা সত্যিই সংশোধন করে দিতে পারেন, তাহলে এর সঙ্গে নিশ্চয় নির্বাচন কমিশনের কর্মীরাও জড়িত। তবে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মেলেনি। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হয়তো এগুলো প্রতারণা, অর্থ আদায়ের কৌশল।

জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে ভুক্তভোগীরা জানেন কী জ্বালা। সংশোধন করতে গিয়ে জেরবার, অর্থ আর সময়ের অপচয়ে হয় বিরক্তি। আর এই সুযোগে ‘ব্যবসা ফেঁদেছে’ কয়েকটি চক্র। ফেসবুকে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা এক দিনেই নাম সংশোধন করে দেয়ার কথা বলছে। এ জন্য তাদের দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা।

শুরুতে নাম সংশোধন করা যেত বিনা মূল্যে। তবে এখন ভ্যাটসহ লাগে ২৩০ টাকা। জমা দিতে হয় কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র। কিন্তু বিষয়টি আসলে এত সহজ নয়। আবেদন জমা দেয়ার পরও নানা অজুহাতে ভুক্তভোগীদের ঘুরতে হয়।

এর মধ্যে ফেসবুকে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র হেল্পলাইন’ নামে একটি পেজের সন্ধান পাওয়া গেছে। আকাশ মাহমুদ নামে একজন সেটি পরিচালনা করেন।

তাতে এক দিনেই পাঁচ হাজার টাকায় নামের বানান ভুলসহ জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘ক’ ক্যাটাগরির সমস্যার সমাধানের জন্য পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, চার হাজার টাকা দিলে দুই দিনে জোগাড় করে দেয়া হবে স্মার্ট কার্ড।

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, এরা প্রতারক চক্র। মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য এসব বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে।

এসব ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। সেটা হলো, যদি বেশি টাকা দিয়ে এক দিনে সংশোধন সম্ভব, তাহলে কেন মানুষকে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। আর যদি বাইরের লোকেরা সত্যিই সংশোধন করে দিতে পারেন, তাহলে এর সঙ্গে নিশ্চয় নির্বাচন কমিশনের কর্মীরাও জড়িত।

তবে এসব প্রশ্নের কোনো জবাব কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মেলেনি। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হয়তো এগুলো প্রতারণা, অর্থ আদায়ের কৌশল।

জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন করতে নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের পাশে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে। তবে সহজে সমাধান পান না কেউ। অপেক্ষার পালা যেন ফুরায় না। প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভোগান্তিতে অসংখ্য নাগরিক।

পুরান ঢাকার শিংটোলার বাসিন্দা অর্নব দেবনাথ। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের বানান এসেছে অনর্ব। তিনি যোগাযোগ করেন ‘জাতীয় পরিচয়পত্র হেল্পলাইন’ পেজের ইনবক্সে। আকাশ মাহমুদ পরিচয়ে সেই ব্যক্তি বললেন, এটা ব্যাপার না। টাকা দিলেই কাজ হয়ে যাবে। যোগাযোগ করার জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও দিয়ে রেখেছেন তিনি।

নিজের পরিচয় গোপন রেখে এই প্রতিবেদক জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম সংশোধনের কথা বলে সেই পেজে যোগাযোগ করা হলে আকাশ মাহমুদ নামের সেই ব্যক্তি বলেন, ‘হ্যাঁ সম্ভব। সে জন্য ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে এ জন্য যে সরকারি খরচ ২৩০ টাকা সেটা আলাদা দিতে হবে।’

এক দিনেই পারবেন?-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এক দিনেই সম্ভব।’

কীভাবে পারেন?- জানতে চাইলে বলেন, ‘ইলেকশন কমিশনের অফিসার আমার পরিচিত।’

ঢাকার মধ্যবাড্ডায় তার মোবাইল ফোনের দোকান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, গুলশান নির্বাচন অফিসেও তার ‘ভাই–ব্রাদার’ আছে। পাশাপাশি প্রতি বৃহস্পতিবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে তিনি আসেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘বিভিন্ন রকম চক্র রয়েছে যারা এ রকম কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফেসবুকের এসব পেজের সঙ্গে কারা কারা আছে, সেটি তদন্ত করে এগুলো এখনই ব্লক করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর কথা বলতে রাজি হননি। ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি ইসির সিস্টেম ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ফেসবুকে এসব গ্রুপ অক্টোপাসের মতো বাড়তে থাকে মন্তব্য করে সিস্টেম ম্যানেজার আশরাফ হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে র‍্যাবকে দিয়ে এ রকম একটা চক্র ধরিয়েছি। মামলা হয়েছে। দুইজন গ্রেপ্তারও হয়েছে৷’

তিনি বলেন, ‘যে ফেসবুক পেজ থেকে এসব সংশোধনের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, সেই পেজটা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করব।’

তারা যে এক দিনের মধ্যে সংশোধন করে দিতে পারছে, কমিশনের কর্মকর্তারা এতে জড়িত না থাকলে কীভাবে তা সম্ভব, বা তারা এক দিনে সংশোধন করে দিতে পারলে আপনারা কেন পারেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা বলা মুশকিল। আমাদের কাছে তো এ রকম ধরা পড়ে না।’

দালালরা আদৌ এটা করতে পারে কি না প্রশ্ন তুলে ইসি কর্মকর্তা বলেন, ‘নাকি না করেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’

কী কী পরিবর্তন করা যায়

জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন অনুযায়ী, ‘ক’ শ্রেণির সংশোধন উপজেলা নির্বাচন অফিসে করা যাবে। তবে ‘খ’ শ্রেণির সংশোধন করার ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার৷ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সংশোধন করবেন ‘গ’ শ্রেণির। আর ‘ঘ’ শ্রেণির সংশোধন করার এখতিয়ার শুধুমাত্র এনআইডি ডিজির।

‘ক’ শ্রেণিতে ২২ ধরনের তথ্য পরিবর্তন করতে আবেদন করা যাবে।

এগুলো হলো: নিজ নামের বানান সংশোধন, নামের আংশিক পরিবর্তন, বাংলা নাম অনুসারে ইংরেজি নাম কিংবা ইংরেজি নাম অনুসারে বাংলা নাম, বাবা মায়ের নাম আংশিক পরিবর্তন, বাবা মায়ের নামের বানান সংশোধন, স্বামী বা স্ত্রীর নামের আংশিক পরিবর্তন, স্বামী বা স্ত্রীর নামের বানান সংশোধন, বাবা, মা, স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যু সাল পরিবর্তন, জন্ম নিবন্ধন নম্বর পরিবর্তন বা সংশোধন, জন্ম তারিখ সংশোধন, লিঙ্গ পরিবর্তন, বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন, জন্মস্থান পরিবর্তন, পেশা পরিবর্তন, দৃশ্যমান শনাক্তকরণ চিহ্ন পরিবর্তন, রক্তের গ্রুপ সংযোজন/পরিবর্তন, ঠিকানা সংশোধন, আরএমও, টিআইএন নম্বর পরিবর্তন বা সংশোধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর পরিবর্তন বা সংশোধন এবং মোবাইল বা ফোন নম্বর পরিবর্তন।

‘খ’ শ্রেণির সংশোধনে স্বামী বা স্ত্রীর নাম সংযোজন/বিয়োজন/পরিবর্তন, পাবলিক পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী পাঁচ বছর পর্যন্ত সংশোধন, শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তন, অসমর্থতা, ধর্ম পরিবর্তন এবং বায়োমেট্রিক হালনাগাদ।

‘গ’ শ্রেণির সংশোধনে পাবলিক পরীক্ষার সনদ বা যথাযথ সনদের ভিত্তিতে নিজ নামের সম্পূর্ণ পরিবর্তন এবং বাবা বা মায়ের নামের সম্পূর্ণ পরিবর্তন, পাবলিক পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী জন্মতারিখ পরিবর্তন করা যায়।

‘ঘ’ শ্রেণির সংশোধনে তিন ধরনের তথ্য সংশোধন করার সুযোগ থাকছে। সেগুলো হলো—নিজ নাম সম্পূর্ণ পরিবর্তন, বাবা বা মায়ের নামের সম্পূর্ণ পরিবর্তন এবং চাকরির বয়সসীমা, মুক্তিযোদ্ধা, ভোটার যোগ্যতা, প্রার্থীর বয়সসীমা, বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির বয়সসীমাসহ সব ক্ষেত্রে জন্মতারিখ সংশোধন।

কীভাবে আবেদন করতে হয়

আবেদনকারীকে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় দলিলসহ আবেদন পাওয়ার পর উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা তা কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আপলোড করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *