সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

1 min read

তারিখ ঘোষণা না হলেও আগামী ডিসেম্বরেই হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দলের এই সম্মেলন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, নির্বাচনে জয়ী হওয়া দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন নেতৃত্বকে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হতে হবে।

পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হতে পারে। তাই নতুন নেতৃত্বকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। তবে এবারও আলোচনার বাইরে থাকছে দলীয় সভাপতি পদটি। পদটিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সভাপতির পদে দীর্ঘ ৪১ বছরের যোগ্য নেতৃত্ব দলকে টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়েছে। তাই সব জল্পনা-কল্পনা ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ ঘিরেই। ‘ড্রয়িং রুম’ থেকে চায়ের দোকান পর্যন্ত সবখানেই আলোচনা—কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক।

দলীয় তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনকে লক্ষ করলে দেখা যায়, টানা তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ থাকেননি। সে হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরেরও পদে থাকা না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ফলে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য চলছে জোর দৌড়ঝাঁপ। দলের অন্তত প্রভাবশালী সাতজন নেতা রয়েছেন এ তালিকায়। তবে পদপ্রত্যাশীরা কোনোভাবেই মুখ খুলছেন না। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই সাধারণ সম্পাদক পদে বসাবেন। তার সিলেকশন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন। এ বিষয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগে যোগ্য নেতারাই নেতৃত্বে আসেন। যারা দলের দুঃসময়ের দলের জন্য অবদান রেখেছেন, দুর্দিনে নির্যাতিত হয়েছেন, এমন ত্যাগী ও বিচক্ষণ নেতারাই আসবেন সামনে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, এমন নেতৃত্বই সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে আবারও স্বপদে চান কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কাউন্সিলরদের সমর্থনে সভাপতি তিনিই হচ্ছেন, এমনটাই জানান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাই আলোচনা সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরেই।

এদিকে, আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্য থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে দেখা গেছে। সে হিসেবে এবারও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে গুরুত্ব থাকছে বেশি। সে হিসেবে আলোচনায় আছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুুর রাজ্জাক ও আবদুুর রহমান। তবে সভাপতি শেখ হাসিনা দল ও সরকারকে আলাদা করার যে কৌশল নিয়েছেন, তাতে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে এগিয়ে আছেন দুজন। তারা হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। তারা দুজনই মন্ত্রী-এমপি কোনোটিই নন। গত নির্বাচনে তারা মনোনয়নও পাননি। এর মধ্যে নানক তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন, যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুর্দিনের নেতা হওয়ায় সারা দেশে নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাও আছে। আবদুর রহমানও ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে দক্ষ সংগঠক হিসেবে দলে তার পরিচিতি আছে। আবার গত সম্মেলনে আলোচনায় থাকা ড. আবদুুর রাজ্জাক এবারও পিছিয়ে নেই। কারণ, গত নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যেও কেউ কেউ। তারা হলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

মাহবুব-উল-আলম হানিফের তৃণমূলে দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিতি আছে। সাধারণ সম্পাদক পদে ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনাও কম নয়। তিনি মন্ত্রী এবং দলের সাংগঠনিক কাজেও ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছেন। গত সম্মেলনে যুগ্ম সম্পাদক হওয়া আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতাকর্মীদের কাছে পছন্দের।

তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, এবার সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য এবং চেইন অব কমান্ড রক্ষাকারী নেতাই আসবেন। এবারের সম্মেলনের গুরুত্ব অন্যবারের চেয়ে বেশি। নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে দলে যেখানেই দ্বন্দ্ব-বিভেদ, গ্রুপিং-কোন্দল, সেখানেই কেন্দ্রের কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে সাধারণ সম্পাদককে। তাই নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক বিরোধ মিটিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ২০২৩-২৪ ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এই জাতীয় সংসদ এবং আমাদের পার্টির জাতীয় সম্মেলন এই দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের আরো ‘স্মার্ট’ নেতৃত্ব আসবে।

কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী সুসংগঠিত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আজ উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির অভিযাত্রা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এক অপ্রতিরোদ্ধ উন্নয়নের অহংকার নিয়ে। আগামী জাতীয় সংসদ এবং জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ আরো সুসংগঠিত সুশৃঙ্খল, আরো আধুনিক, আরো স্মার্টার হয়ে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অংশ নেবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুুর রাজ্জাক বলেন, এবারের সম্মেলন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। দলের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠপর্যায়ে দল গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাচাই করতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কাজ করছে। আগামী সম্মেলন থেকেই নির্বাচনের হওয়া শুরু হবে।

দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরে আমাদের জাতীয় সম্মেলন হবে বলে আশা করি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন হবে। নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বিচক্ষণ পর্যালোচনায় যোগ্য নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। দলীয় নেত্রীর সিদ্ধান্তে দলের সবাই মেনে নেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *