সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

প্লটের টাকা দিয়ে কেউ যেন প্রতারিত না হয়: বাণিজ্যমন্ত্রী

1 min read

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আমার একটা অনুরোধ, টাকা দিয়ে কেউ যেন প্রতারিত না হয়। কেউ কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে প্লট বা ফ্ল্যাট পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে ঘুরছেন, প্রতারিত হচ্ছেন। এমনটা কেন হবে?’

প্লট বা ফ্ল্যাট কিনতে টাকা দিয়ে কেউ যেন প্রতারিত না হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটা অনুরোধ, টাকা দিয়ে কেউ যেন প্রতারিত না হয়। কেউ কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে প্লট বা ফ্ল্যাট পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে ঘুরছেন, প্রতারিত হচ্ছেন। এমনটা কেন হবে?

‘অনেক সময় দেখা যায় মানুষ তার সর্বস্ব দিয়ে, সোনাদানা থেকে শুরু করে যা আছে, সবকিছু বিক্রি করে নিজের একটা বাড়ি করার স্বপ্ন বাস্তবায়নে টাকা-পয়সা দেয়। তারা যেন প্রতারিত না হয়। কারণ কারও দীর্ঘশ্বাস কখনও আল্লাহ সহ্য করেন না। যারা রিহ্যাবের নেতৃত্বে রয়েছেন তারা এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ রাখবেন বলে আমি আশা করি।’

অনুষ্ঠানে ঢাকার আবাসন নিয়ে রাজউকের মহাপরিকল্পনা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) বিষয়ে রিহ্যাব সদস্যরা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমেই ড্যাপের সমস্যার সমাধান হবে। সবকিছু দেখে, সবার জন্য গ্রহণযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি প্রয়োজন মনে হয় আমাকে ব্যবহার করতে পারেন। আমি এখন মন্ত্রী হলে কী হবে, সারা জীবন ধরে তো ব্যবসায়ী ছিলাম। আমি চাই না ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমি চাই দেশটা যেন সবার হয়।’

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের ৫ দিনের এ মেলা চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের পর দুপুর দুইটা থেকে মেলা শুরু হয়। অন্য দিন মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এবারের মেলায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের ২২০টি স্টল রয়েছে। আবাসন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিল্ডিং মেটেরিয়ালস এবং ১৩টি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে।

এ বছর মেলায় দুই ধরনের টিকিট (সিঙ্গেল এন্ট্রি টিকিট ও মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট) রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গেল এন্ট্রি টিকিটের দাম ৫০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকেটের দাম ১ হাজার টাকা। মাল্টিপল টিকিট দিয়ে পাঁচবার মেলায় প্রবেশ করা যাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব আবাসন এখন সময়ের দাবি। সব আইন মেনেই আবাসন প্রকল্প নিতে হবে। তা ছাড়া আবাসন প্রকল্প শুধু মুনাফার জন্যই হওয়া উচিত নয়। মুনাফার সঙ্গে মানুষের সেবা দিতে হবে। লো-কস্ট হাউজিং বা সাধারণ লোকদের আবাসনের ব্যবস্থা এ দেশে নেই বললেই চলে। লো কস্ট এবং মিডিয়াম কস্ট আবাসন আনতে হবে। এমনকি বস্তিবাসীর জন্য আবাসনেরও এখন সময় এসে গেছে।

‘ড্যাপ নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভীতি বা আতঙ্কের কোনো কারণ নেই, সরকার এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে রিহ্যাবের মতো বড় সংগঠন বা ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতি হয়। এটা নিয়ে আলাপের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, এমন নয়। দরজা খোলা আছে, আলোচনা হবে, সবার সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যার সমাধান হবে।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেক সময় যারা পলিসি করেন, তারা ভুলে যান প্রাইভেট সেক্টর বলতে কিছু আছে। অথচ এই পলিসি তাদের জন্য করা হয়। ড্যাপের মতো এত বড় একটা কাজ হচ্ছে। অথচ সেখানে এফবিসিসিআইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ব্যবসা যেহেতু প্রাইভেট সেক্টর করে, আইনকানুন প্রাইভেট সেক্টরকেই মানতে হয়। তাই এসব করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ড্যাপের সঙ্গে অফিশিয়ালি এফবিসিসিআইকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

‘এখন সবকিছু ভার্টিক্যালি হচ্ছে। কৃষি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে ভার্টিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। আবাসনে এখন আরও ভার্টিক্যাল চিন্তা করতে হবে। তাই নীতিমালাও সেভাবে করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণা বদলে গেছে। সেখানে ইন্ডাস্ট্রি হবে, ব্যবসাকেন্দ্র হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে, ফাইভ স্টার হোটেল হবে, উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। তাই আমাদের দেশে যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে, সেখানেও আবাসনের জন্য আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করা উচিত এবং রিহ্যাব সদস্যদের সেগুলো উন্নয়নের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

‘আমাদের বিদেশি বায়ার ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ঢাকার বাইরে যেতে চান না। কারণ সেখানে ভালো মানের আবাসনের ব্যবস্থা নেই। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হব। তার প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে। তখন আমাদের মাথাপিছু গড় আয় হবে ১২ হাজার ডলার। সেই হিসেবেই আবাসনসহ সব প্রস্তুতি নিতে হবে।’

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ‘শুধু দেশ উন্নয়ন হলে হবে না, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলেই হবে না, আবাসনের উন্নয়ন হতে হবে। আমরা তা নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু আমরা অশনি সংকেত শুনতে পাচ্ছি। ড্যাপের কারণে আমরা আতঙ্কে আছি। আমরা ড্যাপের বিপক্ষে না, তবে এমন একটি ড্যাপ করবেন না, যাতে এবারের মেলা যেন আমাদের শেষ মেলা না হয়।

‘আবাসনের সঙ্গে ২৬৯টি সাব-সেক্টর কাজ করে। প্রায় ৫০ লাখ লোক এর সঙ্গে জড়িত। তাদের কথা মাথা রেখে এমন একটি ড্যাপ তৈরি করতে হবে, যাতে উইন উইন সিচুয়েশন হয়। জিডিপির ১৫ শতাংশ আসে আবাসন খাত থেকে।’

রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমানুল্লাহ নুরী বলেন, ‘সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিবে। এমন নীতি গ্রহণ করবেন না যাতে (ব্যবসায়ীরা) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ড্যাপ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবাইকে নিয়ে গ্রহণযোগ্য ড্যাপ প্রণয়ন করা হবে।

‘তবে দুঃখ পাই যখন শুনি ঢাকা শহরের ৯৮ শতাংশ ভবন আইন মেনে নির্মাণ হয়নি। কষ্ট লাগে যখন শুনি ঢাকা শহরের অধিকাংশ ভবন ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এর জন্য শুধু ভবন নির্মাণ করলেই হবে না, এ বিষয়ে বিদ্যমান সরকারের নীতি মেনে চলতে হবে এবং ভবনের আশপাশের পরিবেশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেখতে হবে।’

সংবাদ প্রতিদিন বিডি / ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *