বিয়ের জন্য চাপ দেয়াতেই শম্পাকে খুন করে প্রেমিক রেজাউল
1 min readশম্পা বেগম নামের এক নারীকে হত্যার পর, ঈগল পরিবহনের লাগেজ বক্সে একটি ট্রাঙ্কে লাশ রেখে যায় খুনি। পরে গাবতলী থেকে ট্রাঙ্ক বন্দি সেই লাশ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। দীর্ঘ ছয় বছর পর সেই হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই।
প্রেমের সম্পর্ক হবার পর বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াতেই শম্পা বেগমকে খুন করেন নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য রেজাউল করিম।
২০১৫ সালের ৩ মে গাবতলী বাস স্টেশনে ঈগল পরিবহনের একটি বাসের লাগেজ বক্সে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর লাশ। হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে পুলিশ।
কিন্তু সূত্রবিহীন এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলেন না তদন্ত কর্মকর্তা। পরে তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে।
চার বছরের তদন্তে সিআইডিও অপরাধী শনাক্তে ব্যর্থ হয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না হয়ে পিবিআইকে আবারও তদন্তের দায়িত্ব দেয় আদালত।
তদন্তে নেমে ২০১৫ সালের ১০ জুনের একটি সাধারণ ডায়রির সূত্র ধরে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশের তদন্ত বিভাগ- পিবিআই।
পিবিআই জানায়, ২০১৫ সালের ৩ মে সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম এ কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কেটে এক ব্যক্তি বাসের বক্সে একটি ট্রাঙ্ক তুলে দেন।
তারপর বাসের হেলপারকে বলেন, সামনের ভাটিয়ারি কাউন্টার থেকে টিকিটের যাত্রী উঠবে। কিন্তু পরবর্তী কাউন্টারে বর্ণিত যাত্রী না ওঠায়, বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে এবং সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ গাবতলীতে পৌঁছায়।
শেষ গন্তব্যে সব যাত্রী তাদের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যায়। এরপর হেলপার দেখেন, বাসের বক্সে একটি ট্রাঙ্ক মালিকবিহীন পড়ে আছে। তখন বাসের ড্রাইভার-হেলপার মিলে ট্রাঙ্কটি নামিয়ে দেখেন, সেটি খুব ভারী।
তাদের সন্দেহ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে দারুসসালাম থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ট্রাঙ্কটি খুলে একজন অজ্ঞাতনামা তরুণীর লাশ পান।
ভিকটিম শম্পা বেগম খুলনার একটি হাসপাতালে মেডিক্যাল সহকারীর কাজ করতেন। সেখানে তার সঙ্গে নৌবাহিনী সদস্য রেজাউলের পরিচয় হয়।
এই পরিচয়ের সূত্রে প্রথমে প্রেম এবং পরে ভিকটিম তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে বদলি হয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে। এরপর শম্পাও কিছুদিন পরে চট্টগ্রামে চলে আসে।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, নিহত শম্পার সাথে অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য রেজাউল করিম স্বপনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু শম্পা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে দিলে স্বপন তাকে হত্যা করে।
পরবর্তীতে তাদের মধ্যে এসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হলে রেজাউল করিম স্বপন শম্পাকে ২০১৫ সালের ২ মে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
আসামি লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে একটি ট্রাঙ্কে ভর্তি করে ঈগল পরিবহনের বাসে তুলে দেয় এবং সুচতুরভাবে ভিকটিমের বাবাকে জানায়, শম্পাকে খুলনার বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু পরে ভিকটিম তার বাবার বাড়িতে না পৌঁছলে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে ভিকটিমের ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় জিডিটি করেন।
ভিকটিমের বাবা পরে রেজাউলের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। গোপন তদন্তে জানা যায়, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১৯ সালে রেজাউলকে তার বাহিনী বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
হত্যার ছয় বছর পর, গেলো শুক্রবার কুমিল্লার ইপিজেড এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে রেজাউল করিম স্বপনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। হত্যার দায় স্বীকার করে স্বপন আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছেন।