মানবিকতার শিখা প্রজ্জ্বলিত হোক
1 min read
আমাদের চারপাশে এমন খুব কম মানুষই দেখি, যিনি নিজের জীবন ও অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট। সবার মুখেই কমবেশি অভিযোগ – এটা হয়নি, ওটা পাইনি ইত্যাদি।
হয়তো এটাই স্বভাবিক, হয়তো মানুষ এমনই, হয়তো এটাই তার প্রকৃতি। কিন্তু যখন হৃদয় সরকারের দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আসে তখন ভাবতে বাধ্য হই, এমন মানুষও আছে আমাদের চারপাশে, কারো বিরুদ্ধে যার অভিযোগ করার কিছু নেই। যে ভাগ্যকে মেনে নিয়ে নিষ্ক্রিয় বসে থাকতে পারতো, পারতো ভিক্ষার থালা নিয়ে রাস্তার ধারে বসে যেতেও। কিন্তু মানবসত্তার আগুন যার ভেতরে দেদীপ্যমান, তার পক্ষে কি নিষ্কর্মা জীবনযাপন কিংবা ভিক্ষাজীবী হওয়া সম্ভব? না! সম্ভব হয়নি হৃদয় সরকারের পক্ষেও। তাকে অভিবাদন।
আমরা বলছি নেত্রকোনার শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকারের কথা। এ তরুণ হাঁটতে পারে না। তার হাতের সব আঙ্গুলও কাজ করে না। তাই মা ছেলেকে কোলে করে নিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে। ছেলেটি পরীক্ষা দিয়েছে, পাসও করেছে।
ছেলেকে মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে আসার দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেন অপর এক ছাত্র। ছবিটি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এই একটি ছবি থেকে আমরা অনেকগুলো ছবি পাই। আমরা দেখি শারীরিক প্রতিবন্দ্বিত্বের প্রবল বাধাকে তুচ্ছ করে অবিশ্বাস্য উদ্যমে লেখাপড়ার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে এক তরুণ। আমরা দেখি এক মমতাময়ী মা-কে, যিনি চলৎশক্তিহীন সন্তানকে পরম মমতায় কোলে-কাঁধে করে সুদূর নেত্রকোণা থেকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
এ উদ্যম, এ মমতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা হৃদয়ের সবটুকু শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিয়ে তাদের সালাম জানাই।
খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় হৃদয় সরকার ৩৭৪০তম হয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, তিনি ভালো একটি সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ পাবেন। আমরা এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ভর্তি পরীক্ষায় হৃদয়ের পাসের খবরে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এবং ফেসবুকে লিখেছেন, হৃদয়কে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তাঁকেও সাধুবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী – সকলের সহযোগিতা পাক হৃদয় সরকার এবং তার মতো সবাই। মানবিকতার শিখা প্রজ্জ্বলিত হোক।