সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

রিকশাচালক ও রাজমিস্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি টাকা লেনদেন

1 min read

একজন অটোরিকশাচালক, একজন ডিম বিক্রেতা, দলের নারী সদস্য পরিচ্ছন্নকর্মী এবং তাদের দলনেতা আবার রাজমিস্ত্রী। এই ক’জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত ছয়মাসে আট কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। তবে এসব টাকা তাদের পেশার মাধ্যমে আয় হয়নি। এই অর্থ সবটাই প্রতারণা করে অর্জন করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষাগতা যোগ্যতা না থাকলেও তারা প্রতারণা করেছেন সব শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত মানুষের সঙ্গে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক মামলা হয়েছে। তিনজনই গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রবাসী ও বিদেশি সেজে পার্সেল পাঠানোর কথা বলে একটি চক্র দফায় দফায় মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। তাদের তিনজনকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

গ্রেফতারকৃতরা হলেন সজিব আহম্মেদ, মর্জিনা আক্তার ও শরিফ হোসাইন। এসময় তাদের হেফাজত হতে ৪৭টি ব্যাংক চেক জব্দ করা হয়।

প্রতারণার প্রথম ধাপ

প্রথমে এই চক্রটি ফেসবুকে বিদেশি নারী ও পুরুষের নাম দিয়ে ভুয়া আইডি খোলে। এরপর সেই আইডি দিয়ে  টার্গেট ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। কখনও কখনও ইউরোপে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী পরিচয়েও ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। কারও কারও সঙ্গে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক, আবার কারও সঙ্গে স্রেফ বন্ধুত্ব করে। কথাবার্তা চলতে থাকে দীর্ঘদিন।  ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। টার্গেট ব্যক্তি বন্ধু বা প্রেমিকা ভেবে সরল মনে ব্যক্তিগত অনেক তথ্য শেয়ার করে। এভাবে কয়েক মাস চলতে থাকে।

দামি উপহার পাঠানো বলে প্রতারণার ফাঁদ শুরু

প্রেম বা বন্ধুত্ব সম্পর্ক হওয়ার পর বিদেশ থেকে পার্সেল করে দামি উপহার পাঠানো হয়েছে বলে জানায়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পার্সেলটি কাস্টমস ডিউটি দিয়ে গ্রহণ করতে হবে বলে জানানো হয়। সেজন্য নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে বলেন। এমনকি বিমানবন্দরে পার্সেলের ছবি তুলেও পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোনও দেয় টার্গেট ব্যক্তিকে। বিশ্বাস করে প্রথম দফায় টাকা দেয় টার্গেট ব্যক্তি। কিছুদিন পর কাস্টমস থেকে জানানো হয়, পার্সেলে প্রচুর বিদেশি মুদ্রা ধরা পড়েছে, এটা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এগুলো অবৈধভাবে আনা হয়েছে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে এটি ছাড়িয়ে আনা সম্ভব। এবার আবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে বলে চক্রটি। আবার টাকা দেয় টার্গেট ব্যক্তিটি। এভাবে উপহারের কথা বলে দফায় দফায় টাকা নেয়।

চক্রের খপ্পরে ব্যবসায়ীর ৫৯ লাখ টাকা

প্রতারক চক্রের খপ্পরে পরে ৫৯ লাখ টাকা দিয়ে মানসিক রোগী হয়ে মারা যান বরিশালের এক ব্যবসায়ী। নিজেদের প্রবাসী পরিচয় দিয়ে বরিশালের এক ব্যবসায়ীকে প্রথমে প্রস্তাব দেয় চক্রটি, তিনি রাজি হন। এরপর দফায় দফায় তার কাছ থেকে ৫৯ লাখ টাকা নেয়। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এই ব্যবসায়ী এক সময় সংসদ নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন। পরে তিনি যখন প্রতারিত হয়েছেন বলে বুঝতে পারেন তখন মানসিক রোগে আক্রান্ত হোন। কয়েকমাস আগে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে ‘দুই কোটি টাকা’ বলে বিলাপ করতেন।

সাতক্ষীরার ইমামের দুই লাখ টাকা

সাতক্ষীরার এক ইমামকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য রিয়াল পাঠানোর কথা বলে দুই লাখ টাকা নিয়ে নেয় চক্রটি। দলনেতা শহীদুল তাকে বলেন, ‘হুজুর, আমি সৌদি আরবের নাগরিক। আমি বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য কিছু সাহায্য করতে চাই।’ তখন ইমাম তার কথায় বিশ্বাস করেন। উপহার পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকেও কৌশলে দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

অটোরিকশা চালক শরিফ ও ডিম বিক্রেতা সজীব বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খোলে

অটোরিকশা চালক সজীব আহম্মেদ ও ডিম বিক্রেতা শরিফ হোসাইন বিভিন্ন ব্যাংকে নতুন নতুন ব্যাংক অ্যাকউন্ট খুলতেন। এসব ব্যাংক অ্যাংকাউন্টের চেক ও ডেবিট কার্ড তারা মর্জিনার কাছে রাখতেন। মর্জিনা সেগুলো প্রতারক চক্রের প্রধান শহীদুল ইসলামের কাছে দিয়ে আসতো। শহীদুল অ্যাকাউন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতেন। প্রতারণা করে যেসব অর্থ তাদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতো, সেগুলো চেক বা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতেন। কখনও কখনও সজীব ও শরিফ চেক দিয়ে টাকা তুলে তা শহিদুলের অ্যাকাউন্টে জমা দিতেন। বিনিময় সজীব ও শরিফ কমিশন পেত।

মর্জিনা মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নকর্মী ছিলেন

মর্জিনা আক্তার মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানবন্দরের চার বছর পরিচ্ছন্নকর্মী ছিলেন। দেশে এসে শহীদুলের সঙ্গে এই প্রতারণা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দলে তার দায়িত্ব ছিল শহীদুলের সঙ্গে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া।

চক্রের প্রধান রাজমিস্ত্রী শহীদুল পলাতক

চক্রের প্রধান শহীদুল এখনো পলাতক। সে প্রথমে রাজমিস্ত্রী ছিলেন। গুলশান-বারিধারা এলাকায় কিছু আফ্রিকান নাগরিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক হওয়ার পর এই প্রতারণা আয়ত্ব করে। তাকে গ্রেফতারে কাজ করছে ডিবি। পুলিশের ধারণা সে পালিয়ে প্রতিবেশী কোনও দেশে যেতে পারে। তবে সর্বশেষ অবস্থান ঢাকাতেই ছিল। তার তিন অ্যাকাউন্টে গত কয়েকমাসে আট কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১১টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *