সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

শিক্ষাখাতে দুর্নীতি : অতিরিক্ত ফি আদায় করছে ড্যাফোডিল!

1 min read

রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কথিত ‌‌’স্পেশাল ক্লাস’ এবং ৩৬ মাসের বেতন পরিশোধসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, কলেজের চাহিদার ভিত্তিতে টাকা পরিশোধ না হলে পরীক্ষার ফর্মও পূরণ করতে দেয়া হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টে নম্বর কম দেয়ার হুমকি-ধমকিও দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এমন অনেক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কিত সকল তথ্য-প্রমাণ বিবার্তার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের (এ সেকশন) শিক্ষার্থীদের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের পড়ালেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। গত ২৮ এপ্রিল গ্রুপের একজন শিক্ষার্থী চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগ পর্যন্ত ৩ বছরের কলেজের বেতনাদি পরিশোধ করতে হবে কেন জানতে চাইলে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ঝারকা সুলতানা জানান, অবশ্যই তাকে ৩ বছরের কলেজের পাওনা বেতন পরিশোধ করতে হবে।

এ সময় শিক্ষিকার এমন অপ্রত্যাশিত বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে মো. আদনান হোসেন খান নামের এক শিক্ষার্থীকে উক্ত গ্রুপ থেকে বের করে দেন শিক্ষিকা ঝারকা। এরপর এ ঘটনায় গ্রুপের অন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এ সেকশনের কাউন্সিলর ঐশ্বর্য চৌধুরী জানান, শিক্ষার্থীদের কেবল মাত্র ২৪ মাসের বেতন দিলেই হবে। একই সাথে স্পেশাল ক্লাস সম্পূর্ণ ফ্রি করাবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। কিন্তু এর কিছুদিন পর থেকেই আবারো অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দেয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, গত ৩ আগস্ট গাইড শিক্ষক রানা শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জার গ্রুপে স্পেশাল ক্লাস বাবদ অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা দেয়ার নির্দেশনা জানান। উক্ত ফি পরিশোধ করা ছাড়া পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি। পরে শিক্ষার্থীদের বাসায় মোবাইলে ফোন করেও বাড়তি ৬ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়ে অভিভাবকদের জানান সেকশনগুলোর গাইড শিক্ষকরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপে গত ১২ আগস্ট গাইড শিক্ষক রানা কলেজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অতিরক্ত টাকা আদায়ের একটি লিস্ট দেন, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নামের পাশেই ছিলো বাড়তি ৬ হাজার টাকা। টাকাগুলো শিক্ষার্থীদের দ্রুতই পরিশোধ করতে বলা হয়। অন্যদিকে শিক্ষক রানার বিরুদ্ধে অ্যাসাইনমেন্টে নম্বর কম দেয়ার হুমকি, শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন ও অপেশাদার আচরণের অভিযোগও উঠেছে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে।

ভুক্তভোগী কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, বিজ্ঞান বিভাগে মোট ৪টি সেকশন ( এ, বি, সি, জি) আছে। প্রতিটি সেকশনে আছেন ৩ জন করে গাইড শিক্ষক। গণিতের শিক্ষক রানা একই সাথে সি সেকশনের গাইড শিক্ষকও।

কলেজের প্রতিটি সেকশনের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় আমাদের। এসময় শিক্ষার্থীরা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার জন্য বারবার অনুরোধ জানান। প্রতিবেদনে নাম প্রকাশিত হলে ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর কম দেয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজ্ঞান এ সেকশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, শুরুতে আমাদের ভাইস প্রিন্সিপাল ঝারকা ম্যাম আমাদের ৩ বছরের বেতনের কথা বলেছিলেন। পরের দিন কাউন্সিলর ম্যাম ২৪ মাসের বেশি বেতন দেয়া লাগবে না বলে জানান। এরপর আমাদের বাধ্য করা হয় স্পেশাল ক্লাস করতে। যদিও বলা হয়েছিল স্পেশাল ক্লাস বাবদ কোন টাকা লাগবে না। কিন্তু এখন এই ৬ হাজার টাকা না দিলে আমাদের ফরম পূরণ করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন।

বি সেকশনের অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য সেকশনের মতো আমাদের সেকশনেও একই সমস্যা। হঠাৎ করে কলেজ থেকে জানানো হয়েছে, জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক সাথে ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। এটা আমাদের কাছে থেকে একরকম জোর করেই নিচ্ছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আমাদের বলা হয়েছিল ২৪ মাসের পরে আমাদের কারো কাছে থেকে কোন টাকা নিবেন না। তাহলে স্পেশালের নামে কেন বাড়তি টাকা নিচ্ছে?

কলেজের বিভিন্ন সেকশনের বেশকিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা সবাই একই ধরনের অভিযোগ করেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবার্তাকে বলেন, ফর্ম ফিলাপের ডেট দিয়ে হঠাৎ করে বিশেষ ক্লাশের নামে আলাদা ৬ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। স্পেশাল ক্লাস যদি বাধ্যতামূলক হয়ই, তবে কেন আমাকে আগে জানানো হল না? এখন হঠাৎ করে বেতনের সাথে যোগ করে দিয়েছে। এটা তো এক্কেবারে দুর্নীতির পর্যায়ে চলে গেছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে গাইড শিক্ষক রানা মোবাইল ফোনে বলেন, এটা তো অফিশিয়াল বিষয় অপনি অফিসে আসেন, কোন অভিযোগ থাকলে সেটা অফিসে এসে বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আসলে এ ব্যাপারে আমার কোন কিছু বলার নাই। কোথায় কে কি বললো, সেটা আমি কিভাবে বলবো? ধানমণ্ডি ২৭ এ আমাদের অফিস। আপনি অফিসে এসে কথা বলুন।

এদিকে ৩ বছরের বেতন আদায়ের ব্যাপারে ভাইস প্রিন্সিপাল ঝারকা সুলতানা বলেন, আমি সরি। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। এ ধরনের কিছু হয়নি। এটা আসলে একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিলো। পরে আমি ওদের এ বিষয়ে বলে দিয়েছি। ওরা সারাক্ষণ গ্রুপে অনেক কিছু লিখতে থাকে। আমি ভেবেছি এটা সিরিয়াস কিছু না। তাই ‘ইয়েস’ লিখে দিয়েছি। ২৪ মাসের বেশি কোনো বেতন নেয়া হয়নি। ভবিষ্যতেও নেয়া হবে না। আর আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সাথে বাকি বিষয়টা বুঝে নিবো। আপনার কাছে যদি অথেনটিক কোন প্রমাণ থাকে তবে কলেজে এসে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলেন।

স্পেশাল ক্লাস বাবদ অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি এখন কথা বলবো না। আপনার কাছে অথেনটিক প্রমাণ থাকলে কলেজে আসুন। আমি কথা বলবো। যতটুকু বলার আমি বলেছি।

কলেজের শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের প্রিন্সিপাল শিবলি সাদিককে গত রবিবার (১৫ আগস্ট) রাতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল ও টেক্সট মেসেজ করেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। পরের দিন সোমবার দুপুর ১২টার দিকেও মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে আবার মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করে বলেন, আমি গাড়িতে আছি। এই কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি। পরে স্বশরীরে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অফিসে গেলে এ প্রতিবেদকের সাথে অভিযোগ নিয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি প্রিন্সিপ্যাল।

পরে আব্দুল হাকিম নামের এক শিক্ষক বলেন, আপনাদের যে অভিযোগগুলো আছে সেটার বিষয়ে আজকে কিছু বলতে চাই না। ২১ তারিখে আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে আপনাদের সাথে প্রিন্সিপাল স্যারের অফিশিয়াল সাক্ষাতকারের ব্যবস্থা করে দিবো।

উল্লেখ্য, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের শেষ সময় ২৫ আগস্ট। সুত্রঃ বিবারতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *