সংবাদ প্রতিদিন বিডি

সংবাদ প্রতিদিন বিডি

করোনাকালের ভরসা টেলিমেডিসিন সেবা

1 min read

দেশে এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধগতি।  বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা, রোগ নির্ণয় ইত্যাদির জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। বাইরের পরিবেশ এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় কোনও রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা, রোগ নির্ণয় বা করোনা ভাইরাসের বিষয় এখন ঘরে বসেই জানা যাচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে।

দেশের যেকোনও জায়গা থেকে ডাক্তার ও রোগী দুই প্রান্তে ভিডিও বা ভয়েস কলের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সেবা নেওয়া যাচ্ছে।  প্রয়োজনে ভিডিও কলে যুক্ত হয়েও ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন রোগী।  এমনকি ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চিকিৎকের সঙ্গে চ্যাট করেও বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র নেওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন টেলিমেডিসিন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে করোনায় আক্রান্তরাও ফোন, ভিডিও কল বা চ্যাট করেও পরামর্শ নিতে পারছেন।

দেশে ৩০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছে।  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সরকারের স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩, পালস হেলথকেয়ার সার্ভিসেস, লাইফস্প্রিং, অর্ক হেলথ লিমিটেড, সিনেসিস হেলথ, টনিক, ডিজিটাল হসপিটাল, প্রাভাহেলথ ইত্যাদি। এরমধ্যে স্বাস্থ্য বাতায়ন ২০১৫ সাল থেকে সেবা দিচ্ছে।

বেসিস (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস) সূত্রে জানা গেছে, দেশে টেলিমেডিসিনের বাজার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার।  প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি রোগী টেলিমেডিসিন সেবা নিচ্ছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশের টেলিমেডিসিন সেবা নিতে পারবেন।  তবে দেশে হাইব্রিড হাসপাতালের সংখ্যা বাড়লে এই বাজার আরও বড় হবে।  করোনাকাল, বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন রোগের উদ্ভব, চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে দেশের হাসপাতালগুলো হাইব্রিড ব্যবস্থায় গেলে দেশের চিকিৎসা সেবা আরও ভালো হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

দেশের নাগরিকরা ৩৩৩ নম্বরে (জাতীয় হেল্পলাইন) ফোন করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা পেতে ১ চেপে মেন্যুতে প্রবেশ করে ঘরে বসেই নিরাপদে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারছেন। করোনাকালে হেল্পলাইনে ফোনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা, রক্তদান কার্যক্রম, নিরাপদ পরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা. শেখ মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, টেলিমেডিসিন এখন সময়ের দাবি, চাহিদা পূরণের একটি প্রক্রিয়া।  অনেক প্রবীণ চিকিৎসক এখন সরাসরি রোগী না দেখে করছেন ভার্চুয়াল চেম্বার। এটি তিনি যেমন তার পেশার প্র্যাকটিস করছেন একইসঙ্গে দীর্ঘদিন একই চিকিৎসক দেখানো রোগীরা আস্থার সংকটে পড়ছেন না।  অনেক প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে ভার্চুয়াল রাউন্ড। সময়ের প্রয়োজন ভার্চুয়াল রাউন্ডে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি।  গত ২ বছরে টেলিমেডিসিন বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ৫ থেকে ১০ শতাংশ সিনিয়র চিকিৎসক রোগী দেখার প্রক্রিয়ায় ডিজিটালাইজেশনের অভাবে রোগী দেখতে পারছেন না।

করোনাকালে এগিয়ে যারা

টেলিমেডিসিন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পালস হেলথকেয়ার সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাধারণ সময়ের চেয়ে বর্তমানে ভিডিও কলে ডাক্তার দেখানোর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।  আমাদের সঙ্গে থাকা স্বনামধন্য ডাক্তারদের ভিডিও কলের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগের চেয়ে নূন্যতম দ্বিগুণ হয়েছে।

তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ভিডিও কলের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সেই সঙ্গে করোনা বা অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যায়, নানা প্রয়োজনে ও উপদেশের জন্য অভিজ্ঞ রেজিস্টার্ড ডাক্তারদেরও প্রতিদিন আট থেকে ১০ জন করে রোগী দেখতে হচ্ছে ভিডিও বা অডিও কলের মাধ্যমে। তিনি উল্লেখ করেন, করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।  এইরকম মহামারির মাঝে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া রোগী ও তার সঙ্গে যাওয়া যেকোনও ব্যক্তির জন্য খুবই বিপজ্জনক।  যেসব চিকিৎসার জন্য অস্ত্রপোচার বা হাস্পাতালে ভর্তি প্রয়োজনীয় নয় সেসব টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে খুব ভালোভাবেই দেওয়া সম্ভব।  তাই এই অবস্থায় টেলিমেডিসিন খুবই প্রয়োজনীয় একটি সেবা।

মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বলেন, করোনাকালে সাধারণ মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা আমাদের ডাক্তার কল সার্ভিসটি খোলা রাখছি।  যেখানে কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই কোনও রোগী তাৎক্ষণিকভাবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন নিতে পারছেন।  এর জন্য আমাদের মোবাইল অ্যাপ, কল সেন্টারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে নিবন্ধন করতে পারছেন।

সিনেসিস আইটি লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে ডাক্তাররা শুধু কথাই বলবে না একইসঙ্গে ভিডিও কলে দেখবে, রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, তাপমাত্রা দেখা ইত্যাদি যুক্ত করা যায় কীভাবে সেটা নিয়ে সরকারে সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।  আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবো।

একইসঙ্গে মানসিক চিকিৎসা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ক্যান্সারের মতো জটিল রোগেরও চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, আমরা ইলেকট্রিক্যাল মেডিকেল রিপোর্টের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি যাতে রোগীদের বারবার ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট নিয়ে না আসতে হয়।  একটি আইডির মাধ্যমে সব যায়গা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে এবং একটি আইডিতে যেন সব রিপোর্ট থাকে যাতে কোনও রোগীকে চিকিৎসার জন্য রেফার করতে না হয়।

ভরসার নম্বর ১৬২৬৩

জানা যায়, সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩) থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ১ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৫২ জন।  তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশকে চিকিৎসা ও পরামর্শ নিয়েছেন।  স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত তথ্য নিয়েছেন ৬ শতাংশ, ৪ শতাংশ ফোন এসেছে অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য, ১৭ শতাংশ ফোন কল এসেছে অন্যান্য সেবা সম্পর্কে জানতে চেয়ে এবং ৩ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে।

এছাড়া গত বছর করোনাকালে স্বাস্থ্য অবকাঠামো যখন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল তখন মানুষকে সেবা দেওার জন্য স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ একটি অভিনব সেবা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।  অন্যান্য সেবা যখন মিলছিল না, তখনও অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়ার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম স্বাস্থ্য বাতায়ন সবসময় খোলা ছিল। মহামারির এই এক বছরে স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ হটলাইন থেকে ৮৮ লাখের বেশি মানুষকে করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে যাদের পরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়েছে, পরবর্তীতে হেল্পলাইন থেকে ফোন করেও খোঁজখবর নেওয়া হয়, পরামর্শ সেবা দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *